কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক ৩০/০৭/২০১৭
সুমহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী , যিনি নিজেই একটি ইতিহাস ও ইতিহাসের উপাদান।আজ সেই বেলাল মোহাম্মদ এর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী।
তিনি ২০১৩ সালের এই দিনে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভোর ৪টা ১০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক কবি বেলাল মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম মাহমুদা খানম ও বাবার নাম মৌলভী মোহাম্মদ ইয়াকুব। ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে ভাষা আন্দোলনসহ নানা আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তিনি ১৯৬৪ সালে তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকার সাব-এডিটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
বাঙালির ক্রান্তিকালে,ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনের সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে জনযুদ্ব হয়েছিলো,ঠিক সময়ে তিনি প্রেরণার বাতিঘর হিসেবে জাতিকে মুক্তিযুদ্বের সঠিক তথ্য দিতে,মুক্তিকামী জনতা কে প্রেরণা দেয়ার লক্ষে “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র” প্রতিষ্ঠা করেন।
যুদ্বকালীন সময়ে এই বেতার কেন্দ্র ছিলো বাঙালির একমাএ আশ্রয় স্থল। জীবনবাজি রেখে তিনি বাঙালির অমূল্য ইতিহাসের ধারক বাহকের ভূমিকা পালন করে গেছেন।বঙ্গবন্ধু কে স্বপরিবারে হত্যার পরে তাকে দিয়ে মিথ্যা ইতিহাস লেখাতে চেয়েছিল।তিনি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কাজ করেছেন,আর তাই সত্যে অবিচল থেকে জাতিকে ঘোষণা বিতর্কের কলংক থেকে বাঁচিয়েছেন।
তিনি নিজে কবি, পুঁথিপাঠক একজন সুসাহিত্যিক ছিলেন।তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৭৬ টি। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসমান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০১০ সালে কবি কে স্বাধীনতা পুরুষ্কারে ভূষিত করা হয় । পুরুষ্কার টি তিনি বাংলাদেশ বেতার কে দান করে গেছেন।এমনকি প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে “মুজফফর – লালমোহন ওয়ার্কসপ” করে গেছেন। দেরীতে হলেও তাঁর অবদানের প্রতি সুবিচার করা হয়েছে।
জাতির এই বীর কন্ঠসেনাপতি কে নিজ বাসভূমী সন্দ্বীপে সম্মান জানিয়েছে ও সন্দ্বীপের তরুণ প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্বের এই জীবন্ত কিংবদন্তী কবি বেলাল মোহাম্মদ কে তুলে ধরেছিল সন্দ্বীপ ফ্রেন্ডস সার্কেল এসোসিয়েশন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে ২০১০ সালের ২০ নভেম্বর সন্দ্বীপ পাবলিক হাই স্কুলের অডিটোরিয়ামে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে “ফ্রেন্ডস সার্কেল এ্যাওয়ার্ড -২০১০”আজীবন সম্মাননা পুরুষ্কার প্রদান করা হয়।
সেদিনের সংবর্ধনায় বক্তব্যে কবি বেলাল মোহাম্মদ বলেছিলেন- “স্বাধীনতা ঘোষণা আমি জীবন্ত সাক্ষী”। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য তার দেহটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কে দান করে গেছেন।
বেলাল মোহাম্মদ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এমন একটি প্রয়োজন উপাদান যাকে বিশ্লেষণ করলে ত্যাগ আর মানব প্রেমের সংঘা খুঁজে পাওয়া যাবে।মুক্তিযুদ্বের চেতনার উপর প্রতিক্রিয়াশীল জনগোষ্ঠী যখনি উঠে পরে লেগেছে ঠিক তখনি জাতির ক্রান্তিকালে তিনি কলম ধরে সদা পাহারা দিয়েছেন সঠিক ইতিহাস।এজন্য তাকে জোট সরকারের সময়ে দীর্ঘদিন নির্বাসনে জীবন কাটাতে হয়েছে।সত্য বলার অপরাধে তার একমাএ সন্তান কে হারাতে হয়েছে।
ওনার চতুর্থ মৃত্যু বার্ষিকী তে আমরা সন্দ্বীপটিভি পরিবারের পক্ষ থেকে সষ্টার কাছে ওনার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।