রাশেদুল তুষার ৩১ মে, ২০১৭
তিন বছর পর প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছেন ফয়সল আহমেদ। প্রাণের হালিশহর আবাসিক এলাকার অনেক পরিবর্তনের মধ্যে আরেকটি রং বদল তাঁর নজর কেড়েছে। সেটি হলো হালিশহর হাউজিং এস্টেট মাঠ (সাবেক বিডিআর মাঠ)। তুমুল কৈশোর কিংবা যৌবনে যে মাঠকে সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটুপানিতে ডুবে থাকতে দেখেছেন, কাদামাটি আর আবর্জনায় নোংরা মাঠটি এখন ভরাট, চারিদিকে সীমানাবেষ্টিত। যে মাঠ রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকত, এখন চারপাশে হ্যালোজেন লাইটের আলোয় রাতের বেলা শর্টপিচ ক্রিকেট খেলে কিশোরের দল। লোভের থাবায় চট্টগ্রামে একে একে যখন হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ, তখন কিছু পরিকল্পিত উন্নয়নে পুরো খোলনলচে পাল্টে গেছে হালিশহর হাউজিং এস্টেট মাঠে। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় আবাসিক এলাকা হালিশহরের একমাত্র খেলার মাঠ এটি। হালিশহর আবাসিক এলাকার লক্ষাধিক মানুষের একটু দম ফেলার স্থানও।
সংস্কার করা এই পরিবর্তিত মাঠেই প্রায় এক যুগ পর ফিরেছে জেলা পর্যায়ের ফুটবল। সর্বশেষ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ফুটবলের সেমিফাইনাল, ফাইনালসহ দুটি বাদে সব ম্যাচ হয়েছে ওই মাঠে। কিন্তু বছর দুয়েক আগেও চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এক বছর আগেও সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটুপানিতে ডুবে থাকতো পুরো মাঠ। ফলে পুরো বর্ষাকাল খেলার অনুপযোগী থাকতো মাঠটি। উঁচু-নিচু আর এবড়ো-খেবড়ো, আবর্জনা এবং কাদামাটির জন্য পশ্চিম পাশে প্রায় খেলাই যেতো না। এর বাইরে কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মাঠ দখলের পাঁয়তারাও ছিল। দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে গিয়েছিল তখনই এগিয়ে আসে হালিশহর ফ্রেন্ডস ইউনিক সোসাইটি (হাফুস)। এদের উদ্যোগে ২০১৫ সালের শুরুতে মাটি ফেলে মাঠটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। এতে অর্থ দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন। জাইকা চট্টগ্রাম শহরে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নে পাইপলাইন বসানোর জন্য সড়ক খুঁড়ে যে মাটি উত্তোলন করেছে তা হাফুস কর্তৃপক্ষ আলোচনার ভিত্তিতে হালিশহর হাউজিং এস্টেট মাঠে এনে ফেলেছে। এভাবে প্রায় ৫০০ ট্রাক মাটি ফেলা হয়েছে মাঠে। পরে রোলার দিয়ে সমান করা হয়। এভাবে মাঠকে আগের অবস্থান থেকে প্রায় দেড় থেকে দুই ফুট উঁচু করা হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।
মাঠের চারদিকে তিন ফুট উঁচু বাউন্ডারি দিয়ে সীমানা প্রাচীর করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাঠের অভ্যন্তরে সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে মাঠের চারিদিকে হাঁটাপথ (ওয়াকওয়ে) বানানো হয়েছে। যা সকাল-বিকেল ডায়াবেটিস রোগী থেকে স্বাস্থ্য সচেতন সকলেরই দারুণ কাজে লাগছে। ১৩৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই হাঁটাপথ মাঠের বিশেষত্ব আরও বাড়িয়েছে। চট্টগ্রামে একমাত্র চকবাজারের প্যারেডগ্রাউন্ড ছাড়া আর কোনো মাঠে এ ধরনের হাঁটাপথ নেই।
হাফুসের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে হাফুসের খরচ হয়েছে আরও প্রায় ১২ লাখ টাকা। এই টাকার মধ্যে দুই লাখ ১৮ হাজার টাকা দিয়েছেন সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমীন। এছাড়া তিন জেলা পরিষদ তহবিল থেকে মাঠ উন্নয়নের জন্য আরও ৮ লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বাকি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাফুস বিভিন্ন খাত থেকে ঋণ হিসেবে নিয়েছে। ’ হালিশহরের এইচ ব্লকে অবস্থিত আরেকটি মাঠ যেটি আগে মিলন স্পোর্টিং মাঠ নামে পরিচিত ছিল, সেটি দখলদারিত্বের হাত থেকে রক্ষা করতে চট্টগ্রাম আবাহনী কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর থেকে মাঠের চারদিকে বাউন্ডারি দিয়ে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে হালিশহর হাউজিং এস্টেট মাঠের ওপর চাপ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। লোডশেডিং আর তাপদাহের দিনে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষকে খোলা মাঠে বসে হাওয়া খেতে খেতে আড্ডা দিতে দেখা যায়। মাঠের চারদিকে একাধিক হ্যালোজেন লাইট থাকায় মাঠটিও বেশ আলোকিত থাকে।
গত শুক্রবার বিকেলে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট অন্ততঃ ১৫টি দলে ভাগ হয়ে কয়েক শ শিশু, কিশোর, তরুণ কেউ ফুটবল আবার কেউ ক্রিকেট খেলছে। তিন বছরের ছোট্ট আনবীরকে নিয়ে ফুটবল খেলছেন বাবা আনোয়ার শাহাদাত। হালিশহর হাউজিং এস্টেট মাঠের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে এই অভিভাবক বলেন, ‘আমি নিজেই বন্ধুদের সাথে এই মাঠে খেলে বড় হয়েছি। আমার ছেলেকেও সেই মাঠের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এসেছি। মাঠের কারণেই হালিশহর আবাসিক এলাকায় এখনও প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়া যায়। এবিজেআই ও এইচ ব্লকের লক্ষাধিক বাসিন্দার এটিই একমাত্র উন্মুক্ত ময়দান যেখানে আপনি দিনরাতের যেকোনো সময় বসে খেলা থেকে আড্ডা দিতে পারবেন। ’ এখনকার যুগের ছেলেমেয়েরা মাঠের অভাবে মোবাইল আর কম্পিউটারে ডুবে গেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাঠটি না থাকলে এলাকার তরুণরা বখে যেতো। ’
copy from http://www.kalerkhobor.com/